গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি। মাত্র ৩ মাসে গরু মোটাতাজাকরার আধুনিক উপায়।
গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি। মাত্র ৩ মাসে গরু মোটাতাজাকরার আধুনিক উপায়।
গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পটি অধিক লাভজনক স্বল্প সময়ে অধিক পরিচর্যা আর পুষ্টিগুন সম্পূণ্য খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে অতিদ্রুত মাংস বৃদ্ধির কৌশলকেই গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি বলে। তাই গরু মোটাতাজাকরণ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন আবার সঠিক নিয়ম না জানার কারনে অনেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতিতে আপনাকে ১.৫- ২ বছর বয়সের সংকর জাতের ষাঁড় বাছুর নির্বাচন করতে হবে।গরুটির ঘাড় খাটো, হাড় ও হাড়ের জোড়াগুলো মোটা, বুক চওড়া ও পাঁজরের হাড়গুলো চ্যাপ্টা, কোমরের দুই পাশ প্রশস্থ ও পুরু, উচুঁ ও লম্বা, চামড়া ঢিলা দুই আঙ্গুল দিয়ে চামরা টান দিলে উপরের দিকে উঠে আসবে, সুস্থ্য সবল ও রোগমুক্ত গরু নির্বাচন করতে হবে।
প্রতিটি গরুর জন্য দৈর্ঘ্য ৭ ফুট, প্রস্থ ৪-৫ ফুট ও উচ্চতা ৭-৮ ফুট জায়গা প্রয়োজন। গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।গোয়াল ঘরের মেঝে একদিকে ঢালু রাখতে হবে। প্রতিটি গরুর জন্য একটি চারি গোয়াল ঘরে রাখতে হবে।
গরু ক্রয় করার পর গরুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে।কৃমি মুক্ত না করলে গরুর খাদ্যের পুষ্টির বিরাট অংশ কৃমি খেয়ে গরুকে পুষ্টিহীন ও রক্তশার শূন্য করে ফেলে।একজন পশু ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ট্যাবলেট খাইয়ে কৃমিমুক্ত করতে হবে।
গরুকে আগে থেকে কোন টিকা না দেওয়া থাকলে খামারে এনে ১৫ দিন পরপর সবগুলো গরুকে তড়কা, বাদলা এবং ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। এ ব্যাপারে নিকটস্থ পশু হাসপাতলে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গোয়াল ঘর নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে। গরুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গরুকে পর্যাপ্ত পরিমানে বিশুদ্ধ পানি পান করাতে হব। পানি দেহের পরিপাকতন্ত্র সচল রাখে এবং দেহের মেটাবলিজমে সহায়তা করে। পশুকে পচাঁ বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না।
গরু মোটতাজাকরণে ৬০% আঁশ জাতীয় ও ৪০% দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
দানাদার খাদ্যের মধ্যে খৈল, ভুসি, চালের কুঁড়া, খুদ, শুঁটকি মাছ, ঝিনুকের গুঁড়া, লবণ ইত্যাদি দিতে হবে।এছাড়াও ভালো মানের রেডি ফিড খাওয়ানো যেতে পারে। কারন এতে প্রয়োজনীয় সব উপাদান সঠিক পরিমাণে থাকে।তবে ব্রয়লার মুরগির ফিড খাওয়ানো যাবে না। এতে গরু স্ট্রোক করতে পারে।
আঁশ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে কাচাঘাস, খড় ইত্যাদি দিতে হবে তবে কাচাঘাস না পাওয়া গেলে ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ, এম, এস খাওয়াতে হবে। ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ, এম, এস খেলে গরু প্রায় প্রতিদিন ১কেজির মত বৃদ্ধি পায়। ১ টাকার ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ, এম, এস খাওয়ালে প্রায় ৬-৭ টাকার মত মাংস বৃদ্ধি পায়।
ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস তৈরী পদ্ধতীঃ
ইউ,এম,এস তৈরীর জন্য ৮২% ভাগ খড়, ১৫% ভাগ মোলাসেস বা (চিটাগুড়) এবং ৩% ভাগ ইউরিয়া ব্যবহার করা হয় থাকে।
১০০ কেজি ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস তৈরির জন্য ৮২% খড়,১৫% মোলাসেস বা (চিটাগুড়) ও ৩% ইউরিয়া মেপে নিতে হবে।খড় ২-৩ ইঞ্চি টুকরো করে কেটে নিতে হবে। মোলাসেস বা (চিটাগুড়) ও ইউরিয়া ৪৫-৫০ কেজি পানির সাথে মিশিয়ে দ্রবন তৈরি করতে হবে।
২-৩ ইঞ্চি টুকরো করে কাটা শুকনো খড় পলিখিন বিছানো বা পাকা মেঝেতে বিছিয়ে ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবণটি আস্তে আস্তে ঝর্ণা বা হাত দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং এসময় খড় উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দিতে হবে যাতে খড় ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবনটি চুষে নেয়। এভাবে খড় স্তরে স্তরে সাজাতে হবে এবং ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবন খড়ের সাথে সমানভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
এরপর পলিথিন বা প্লাস্টিকের ডামে অথবা বায়ুরোধী কোন বস্তায় ভরে খড়গুলো এমনভাবে চাপ দিয়ে মুখ বাঁধতে হবে, যেনো বস্তার ভেতর বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। তৈরিকৃত ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস সঙ্গে সঙ্গে পশুকে খাওয়ানো গেলেও ১২ ঘন্টা পর খাওয়ানো ভালো। প্রয়োজন অনুযায়ী ঐ খাদ্য বস্তা খুলে বের করে পশুকে খেতে দিতে হবে এবং বস্তার মুখ সঙ্গে সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রেখে দিতে হবে।
কৃষক তার চাহিদা মত ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস প্রস্তুত করে প্রতিদিন খাওয়াতে পারেন। এক্ষেত্রে উপাদানের পরিমান ঠিক রাখতে হবে। তবে প্রক্রিয়াজাত খড় তিন দিনের বেশী সংরক্ষণ করে রাখা ঠিক নয়। তিন দিনের বেশী সংরক্ষণ করলে এর গুণগত মান কমে যায়। ৬ মাসের উর্দ্ধে পশুকে ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস খাওয়ানো যায়।
- ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস তৈরী করার সময় ইউরিয়া, মোলাসেস, খড় ও পানির অনুপাত ঠিক রাখতে হবে।
- ইউরিয়ার মাত্রা কোন অবস্থাতেই বাড়ানো যাবে ন।
- ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস এর গঠন বা তৈরীর প্রক্রিয়া পরিবর্তন করলে আশানুরুপ ফল পাওয়া যায় না।
- গর্ভবতী পশুকে ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস খাওয়ানো যাবে না।
- ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস পানিতে গুলিয়ে খাওয়ানো যাবে না।
- ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস খাওয়ানোর ১ ঘন্টা আগে ও পরে পশুকে পানি খাওয়ানো যাবে না।
- অসুস্থ পশুকে ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস খাওয়ানো যাবে না। ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউ এম এস পশুকে খালি পেটে খাওয়ানো যাবে না।